■ মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল, এই আইরিশ অগ্নিকন্যাকে আমরা চিনি ভগিনী নিবেদিতা নামে। জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডের টাইরনে ২৮শে অক্টোবর ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। পিতা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল, মাতা মেরি ইসাবেল। তাঁর জীবনের তিনটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। জীবনের প্রথম পর্যায়েই তিনি নিজেকে সমাজকর্মী ও শিক্ষিকা হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। মানব সেবাই ঈশ্বর সেবা -পিতার এই শিক্ষা তাঁর জীবনের মূলমন্ত্রে পরিণত হয় এবং মানব সেবাই তাঁর জীবনের মূল লক্ষ হয়ে ওঠে। সেই লক্ষ্যই নিকটবর্তী হয় যখন স্বামীজির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। স্বামীজির জীবন দর্শনেই তিনি তাঁর মানবতার পথকে প্রত্যক্ষ করেন। স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেন এবং স্বামীজির কাছে দীক্ষা নেন।স্বামীজি তাঁকে দীক্ষা দিয়ে নিবেদন করলেন ভারতমাতার কাজে, নাম দিলেন নিবেদিতা। এখানেই তাঁর জীবনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হল। ভারতে এসে ভারতবর্ষের শিক্ষা-সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের জন্য তিনি নিজেকে নিয়োজিত করলেন। দেশের মেয়েদের শিক্ষিত করার ভার পরেছিল তাঁর উপরেই। স্বামীজির আদেশেই কলকাতার বাগবাজারে মেয়েদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য তিনি একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। সেই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিই বর্তমানে নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় নামে পরিচিত। কালী দি মাদার, ওয়েব অব্ ইন্ডিয়ান লাইফ, ক্রেডল্ টেলস্ অব্ হিন্দুইজম্ ইত্যাদি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। পরাধীন ভারতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নিবেদিতাই তখন সকলের অনুপ্রেরনা। ভারতকে পুনরায় জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাইয়ে দেওয়াই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। কবির কাছে নিবেদিতা তখন লোকমাতায় পরিনত হয়েছেন। স্বামীজির দেহত্যাগের পর তিনি উপলব্ধি করেন স্বামীজির আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে ভারতকে স্বাধীন করতে হবে। পরাধীনতার অন্ধকারে ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব আসা সম্ভব নয় বুঝে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত করেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের তৃতীয় পর্যায়। তাঁর কথা ও কাজে ছিল দেশপ্রেমের আগুন, সেই আগুনের ফুলকি যেখানেই পড়েছে সেখানেই লেলিহান হয়ে উঠেছে। শ্রী অরবিন্দের কাছে নতুন নাম পেলেন - শিখাময়ী। তিনি যুব সমাজের বুকে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন সেই সেইসময়। মাত্র ৪৪ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। ১৮৯৮ এর জানুয়ারিতে ভারতে এসেছিলেন, ভারতবর্ষের সর্বাঙ্গীন কল্যানের জন্য। ১২ - ১৩ বছরের তার সেই অক্লান্ত পরিশ্রম আমরা কখনও ভুলবনা। স্বামীজির মানসকুসুমে প্রস্ফুটিত নিবেদিতাই ভারতের জন্য শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য হয়ে থাকবে।
□

No comments:
Post a Comment